নারী অধিকার আদায়ে যে মেয়েটি আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন, তাকেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ঝালকাঠির ‘স্বর্ণ কিশোরী’ খেতাবপ্রাপ্ত নাছরিন আক্তার সারার ওপর হামলাকারীকে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার থানার সামনে অনশন করেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী যুবায়ের আদনানকে গ্রেফতার করা না হলে থানার সামনেই আত্মহত্যার ঘোষণা দেন সারা। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই সারার ওপর হামলায় করা মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা ঝালকাঠি ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. এনামুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মামলার ডকেট পেয়েছি, আশা করি দু-এক দিনের মধ্যে সারার ওপর হামলাকারীকে আইনের আওতায় আনতে পারব।
জানা গেছে, সারাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার জন্য অভিযুক্ত আদনানের সহযোগী একটি চক্র ফেসবুকে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন সারা। এমন খবর পেয়ে ঝালকাঠির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. হাবীবুল্লাহ বৃহস্পতিবার রাতে সারার বাসায় গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেন। আসামিকে অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাস দেন তিনি। এ সময় শারীরিক নির্যাতনের পরে এখন সাইবার সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন বলে সারা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন।
তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের একটি মসজিদের ইমাম জাকির হোসেনের ছেলে জুবায়ের আদনান বেশ কিছুদিন ধরে নাছরিন আক্তার সারাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ২ অক্টোবর ফকিরবাড়ি সড়কের সারার বড়বোনের ভাড়া বাসায় তার ওপর হামলা চালায় আদনান। একপর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আদনান পালিয়ে যায়। বড়বোন ও প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঝালকাঠি সদর থানায় নিয়ে আসেন। সেখান থেকে তাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে ওই দিন রাতেই ঝালকাঠি থানায় সারা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এর পরই শুরু হয় ফেসবুকে সারাকে নিয়ে জুবায়ের আদনানের সহযোগীদের একের পর এক স্ট্যাটাস। নানা কল্পকাহিনী জুড়ে তাকে মানসিক নির্যাতন শুরু করে চক্রটি। এতে অসুস্থ সারা মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েন। মামলা তুলে নিতে একের পর এক চাপ আসে তার পরিবারের ওপর। মীমাংসায় বসতে তাদের বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি দেয়া হয়। এতকিছুর পরেও নিজের ওপর নির্যাতনের বিচারের দাবিতে অটল সারা।
নির্যাতনের ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও পুলিশ আসামিকে ধরতে পারেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সারা বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঝালকাঠি থানার সামনে অনশনে বসেন। প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাকে দেখে থানার সামনে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। খবর পেয়ে সারার বোন ও ভগ্নিপতি এসেও থানার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারাও ঘটনার বিচারের দাবি জানান। পরে পুলিশ এসে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অনশন ভাঙেন। সারা ঝালকাঠি আকলিমা মোয়াজ্জেম ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর।